বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প

বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভের পর হতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে, কৃষিভিত্তিক খাতের উপর নির্ভর করে। কিন্তু বাংলাদেশ শুরুরদিকে রফতানি শিল্পের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে; বিশেষকরে পাট এবং চা'য়ের দিকে। ১৯৭০-এর পর এবং ১৯৮০ সালের পুরোপুরি সময়ে দেশের প্রধান রফতানিকারক দ্রব্য ছিল পাট এবং পাটের তৈরি জিনিসপত্র।

কিন্তু এখন অন্য জিনিস। উ‌ৎপাদন মূল্য কম হওয়ার কারণে, বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের উপর বৃহ‍‌ৎ পরিমাণ অগ্রগতি লাভ করেছে। খুব কম সময়ে তৈরি পোশাক শিল্প রফতানিকারক শিল্প হিসেবে এক নম্বরে চলে এসেছে। যার ফলে, বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহ‍‌ৎ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ।

এই খাতে তিরিশ লক্ষের উপর লোক কাজ করছে। গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে ৯০% মহিলাকে কর্মজীবি হিসেবে গড়ে তুলতে এটি একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে শিল্পগুলি প্রতি বছর গড়ে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উ‌ৎপাদন করছে। গার্মেন্টস শিল্পকে আরো বড় আকার দিতে দুটি প্রয়োজনীয় উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেগুলি হলো:- উত্তর আমারিকার জন্য বহুমুখী তন্তুর ব্যবস্থা এবং ইইউ দেশ গুলিতে বিশেষভাবে প্রবেশ।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে কেন বাংলাদেশের রেডি ম্যাড গার্মেন্টস শিল্প প্রচুর সফলতা লাভ করেছে তার কয়েকটি পৃথক কারন রয়েছে।

১. বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে খুব কম মূল্যে শ্রমিক পাওয়া যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ঘন্টায় পোশাক শ্রমিক মূল্য ১০.১২ মার্কিন ডলার কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ০.৩০ মার্কিন ডলার। সর্বনিম্ন মজুরির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ঘরভাড়াসহ রফতানি কার্যসম্পাদন স্থান, মেডিক্যাল ভাতা, ভ্রমণ, উৎসব ভাতা, ওভার টাইম বোনাস এবং মাতৃত্ব ভাতা। ইপিজেড এর বাইরে গড় মজুরি ৪০% কম।

২. শক্তি এবং জ্বালানির মূল্য অনেক কম।
৩. সরকার দ্বারা Foreign Direct Investment (FDI) ক্ষেত্রে উৎসাহীত হওয়া এবং কয়েকটি বিশেষাধিকার যা ১০০% বৈদেশিক কোম্পানিগুলিকে উকৃষ্ট করেছে।

৪. গার্মেন্টস দ্রব্যগুলি শিপিং এর কাজে চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্র বন্দর যথাযথভাবে ব্যবহার।

৫. ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলির জন্য শুল্কমুক্ত।

৬. খুব সহজে পরিবহন প্রবেশাধিকার। এখানে একটি সম্ভাবনা আছে সেটা হলো বর্তমানে এক নম্বরে থাকা তৈরী পোশাক রফতানিকারক দেশ চীনের মত তাদের অর্ডারগুলি আউটসর্স শুরু করাতে খুব দ্রত বাংলাদেশও একটি বৃহৎ তৈরী পোশাক রফতানিকারক দেশ হবে । চীনে উৎপাদন খরচ খুব দ্রুত বাড়াছে পরিবেশ বান্ধব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে। ফলে আমদানিকারকরা চীন থেকে বাংলাদেশের দিকে ফিরে আসতে শুরু করেছে।

গার্মেন্টস শিল্পের পূর্ণ অগ্রগতি লাভের জন্য আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা হলো বড় ধরণের অন্তরায় । একবার এই দুটি ইস্যু সমাধান হয়ে গেলে, এটি হবে সবচেয়ে উত্তম জিনিস। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রচন্ডভাবে নির্ভর করে গার্মেন্টস শিল্পের উপর। ফলে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যে ঐ দুটি ইস্যু সরিয়ে নিতে পারলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রফতানিতে সফলতার চূড়ায় পৌছাবে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি প্রত্যাশিত যে এ ধারা চলবে আগামী দশকেও। এবং বাংলাদেশ পাবে একটি অর্থনৈতিক বর্ধনশিল ২০২৫ সাল।

Related articles:
Investment Scenario in Bangladesh

Bangladesh: Business Scenario
Tips on starting a successful business in Bangladesh


Comments

Popular Posts