সালমান এফ রহমান বলেছেন ঔষধ শিল্প বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি উজ্জ্বল করেছে
পশ্চিমা ব্র্যান্ডের পোশাক এবং ঔষধ রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব সবসময় ছিল। ইদানিং গুরুত্ব আরও বেড়েছে কারণ চায়না সহ অন্যান্য দেশে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক পশ্চিমা দেশ এখন বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা শুরু করেছে যা আগে তারা চায়না থেকে আমদানি করতো।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাইভেট কোম্পানি বেক্সিমকো গ্রুপ এই দুইখাতেই সাফল্য অর্জন করেছে। বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইল সেকশনের ত্রেতাদের মধ্যে জারা (Zara)এবং H & M অন্তর্ভুক্ত। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ঔষধ কোম্পানী যেটি লন্ডনে তালিকাভুক্ত প্রথম বাংলাদেশী কোম্পানী। পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্স (আইএফআইসি) ব্যাংকের ৩০% অংশীদার। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সামুদ্রিক খাদ্য, সিরামিক,রিয়েল এস্টেট ,হসপিটালিটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্ত ও মিডিয়া সেক্টরে বিনিয়োগ রয়েছে।
সালমান এফ রহমান তার ভাই সোহেল এফ রহমানের সহযোগিতায় বেক্সিমকো গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত করেন ১৯৭০ দশকের প্রথমে। তিনি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান ও আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত আছেন। একাধারে তিনি বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ উদ্যোক্তা সংগঠনের চেয়ারম্যান, দেশের ক্ষমতাসীন দলের বেসরকারী খাতের-উপদেষ্টা। এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক।
সালমান এফ রহমান সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সম্ভাবনা নিয়ে Nikkei Asian Review এর এক প্রতিনিধির সাথে আলোচনা করেন।
Nikkei Asian Review: পোশাক শিল্প বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানিকারক সেক্টর। আপনি কী এটা স্বীকার করবেন যে অন্যান্য খাত থেকে এটি সরকারের কাছ থেকে বেশী সহায়তা পায়?
সালমান এফ রহমান: পোশাক খাতের সঙ্গে যা ঘটেছে এটা আসলে হয়ে গেছে। আপনি জানেন সফল হওয়া থেকে বড় কিছু নেই। এই খাত সমৃদ্ধ হয়েছিল দ্রুত তাই উদ্যোক্তরা অনেকে এই খাতে বিনিয়োগ করেছেন এবং তাতে এই সেক্টরটি আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। এখন উদ্যোক্তারা অন্যান্য খাতেও মনোযোগ দিচ্ছেন যা অনেকাংশে সরকারের পলিসি গুলোর কারনেই হয়েছে বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাত এখন অনেক বড়। পোশাক উৎপাদনকারীরা তাই সরকারের বাণিজ্য নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
আমি মনে করি আরও উন্নতির জন্য যা প্রয়োজন তা হল পরিকাঠামোর উন্নয়ন। সরকারও এর উপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ( Special economic zones)করা এখন সরকারের লক্ষ্য। এগুলো স্থাপনের জন্য সরকার বিনিয়োগকারীদের জমি প্রদান করবে বলে ঠিক করেছে। যদি এটা ঠিক ভাবে করা যায় হলে আমার মনে হয় অন্যান্য খাতগুলোও এগিয়ে আসবে। বিদ্যুৎ খাতে সরকার ইতিমধ্যে চমৎকার কাজ করেছে। আপনি জানেন আগে ১৪,১৫ ঘন্টার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হত। এখন আর তা হয় না। মানুষ আগের সেই সময় ভুলেই গেছে।
আমি মনে করি এই খাতগুলোর মধ্যে আগামী বছর গুলোতে যে খাতটি সবচেয়ে আকর্ষনীয় হবে তা হল ঔষধ শিল্প। ঔষধের রপ্তানি প্রায় উর্দ্ধমুখী এবং আমরা ত্রমাগত আরো বহুমুখি হচ্ছি।
আর একটা কথা বলি, পরিমাণ এখনো খুবই নগন্য কিন্তু আমরা প্রতি বছর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ফুল রপ্তানি করছি। এখন আমরা জাহাজ ও বাইসাইকেল নির্মাণ করছি। যা দরকার তা হলো অন্যান্য খাতেরও বৃদ্ধি।
Nikkei Asian Review: দেশের পোশাক খাতের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে কী যথেষ্ট কাজ করা হয়েছে?
সালমান এফ রহমান: অনেক কাজ করা হয়েছে। এটি তো একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।এই খাত শুধু একবার বাধার সম্মুখীন হয়নি,অনেকবার হয়েছে। আমার মনে পরে প্রথম সমস্যাটি ছিল শিশুশ্রম যা পরে ঠিক ভাবেই তত্ত্বাবধান করা হয়েছিলো। এরপর সমস্যা ছিল মাল্টি ফাইবার অ্যারাঞ্জমেন্ট যা ২০০৪ সালে শেষ হয়। যখন উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানি পন্যের পরিমাণের উপর কোটা পদ্ধতি বিলুপ্ত হয় তখন বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। কিন্তু তা হয়নি। এবং তারপর আমরা আগুন এবং ভবন ধ্বস সমস্যার সম্মুখীন হই।
সত্যি যে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় কিন্তু আমাদের মূলভিত্তি খুব শক্ত।
Nikkei Asian Review: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমা হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন বিশেষ করে শ্রমিক সংগঠন গঠন করার ব্যপারে। এটি ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয় নাকি রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ?
সালমান এফ রহমান: এটা একটা সমস্যা। অন্তত আমি খুব জোরালোভাবে এটা অনুভব করি।আমি অনুভব করি এটা একটা দ্বি-বৈষ্যম, কারন আপনি জানেন ইউএসএ তে মাত্র ১৫% জনশক্তি সংঘবদ্ধ। নিজেদের দেশে কোন সংগঠন নেই কিন্তু তারা এই নীতি অন্যদের উপর প্রয়োগ করতে চায়। আমার কাছে এটা অদ্ভুত লাগে।
Nikkei Asian Review: বাংলাদেশ স্টক মার্কেটের উত্থান পতনের ইতিহাস রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করা কি এখন নিরাপদ?
সালমান এফ রহমান: প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের স্টক মার্কেটের প্রধান সমস্যা হল এটি অগ্রমুখী। এই বাজারটি পরিনত নয় এবং সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী তেমন নেই। এখানে কিছু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী রয়েছে যাদের কাছে বাজার সম্পর্কিত প্রকৃত তথ্য নেই। তাই যখন তারা বিনিয়োগে যায় বা বিনিয়োগ থেকে বেরিয়ে আসে তারা মৌলিক ভিত্তির পরিবর্তে গুজবের উপর নির্ভর করে। ২০১০-২০১১ বিপর্যয়ের পর সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কাজ করেছে কিছু করেনি। সবসময় বাজারের উত্থান-পতন হয় এবং বিপর্যয় ঘটে,যারা অর্থ হারায় তারা অন্যকে দোষারোপ করে। মূলত তাদের নিজেদেরই দোষারোপ করা উচিত।
সম্প্রতি যা ঘটেছে তা হল demutualization। এর কারনে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কিন্তু আমি এর কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছিনা।
Nikkei Asian Review: বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কি বৃহৎ বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে?
সালমান এফ রহমান: আমি তা বলবো না। আমি বলতে চাই বিশ্বাসের অভাবই পুঁজি বাজারের একমাত্র সমস্যা। দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ শক্তিশালী। উদাহরণস্বরূপ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন একটি সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠান।আমাদের একটি সঠিক বিচার ব্যবস্থা আছে যা ব্রিটিশ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে গঠিত। তাই সব কিছুই ঠিকঠাক আছে শুধু সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ছাড়া। তা অবশ্য এখন বাড়ছে।
বাংলাদেশ একটি ক্রমবর্ধমান দেশ,এটি একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের গত ১৫ বছর ধরে ৬% প্রবৃদ্ধি ছিল। অর্থনীতির সব অংশে উন্নতি হয়েছে। এমন এক সময় ছিল যখন সবকিছুই জাতীয়করন ছিল এবং সরকারই সব কিছু করতো। কিন্তু তা এখন সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রী পরিবর্তন হয়েছে। বেসরকারি খাত এখন শক্ত ভিত্তির উপর দাড়িয়ে আছে।
অনেক মানুষ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সমালোচনা করেন, কিন্তু আমি তাদের বলতে চাই বৃহৎ পরিসরে দেশের আজকের যে অর্থনৈতিক উন্নতি তার পেছনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অবদান আছে। বেক্সিমকো একটি ভাল উদাহরণ। আমরা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার নিয়েছি, তখন কোন বেসরকারি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের এত ঋণ দেয়ার মত পর্যাপ্ত মূলধনই ছিল না। তাই আমাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের কাছে যেতে হয়েছে কারণ ঐ সময় এত অর্থ ঋণ দেয়ার মত যথেষ্ট মূলধন একমাত্র তাদেরই ছিল। এখন অবশ্য কিছু বেসরকারী ব্যাংক এগিয়ে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য সাফল্যের পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো।
Nikkei Asian Review: সরকার ইস্টার্ন ব্লক এর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোক্তাদের সাথে কাজ করার জন্য মনস্থ করেছে। এটি কী কোনো প্রবণতা, এবং এটি কী ইতিবাচক?
সালমান এফ রহমান: আমি মনে করি সরকার যা করেছে তা খুবই প্রশংসার যোগ্য। কারণ আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হল সবাই আমাদের বন্ধু এবং কেউ আমাদের শত্রু নয়, আমাদের সকলের সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে, এবং এই সরকার ঠিক তাই করছে। তাই আমরা বিশাল বোয়িং বিমান কেনার অর্ডার দেই এবং শেভরন ও কনোকোফিলিপসের মত কোম্পানিকে অবিরত গ্যাস অন্বেষণের অনুমোদন দেই, এর সাথে সাথে আমরা চীনা, রাশিয়ান, ভারতীয়, জার্মান, গ্রেট ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয়দের সাথে লেনদেনও করি।
The interview of Salman F Rahman in English can be found in this link: Salman F Rahman said Bangladesh is moving in the right direction
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাইভেট কোম্পানি বেক্সিমকো গ্রুপ এই দুইখাতেই সাফল্য অর্জন করেছে। বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইল সেকশনের ত্রেতাদের মধ্যে জারা (Zara)এবং H & M অন্তর্ভুক্ত। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ঔষধ কোম্পানী যেটি লন্ডনে তালিকাভুক্ত প্রথম বাংলাদেশী কোম্পানী। পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্স (আইএফআইসি) ব্যাংকের ৩০% অংশীদার। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সামুদ্রিক খাদ্য, সিরামিক,রিয়েল এস্টেট ,হসপিটালিটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্ত ও মিডিয়া সেক্টরে বিনিয়োগ রয়েছে।
সালমান এফ রহমান তার ভাই সোহেল এফ রহমানের সহযোগিতায় বেক্সিমকো গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত করেন ১৯৭০ দশকের প্রথমে। তিনি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান ও আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত আছেন। একাধারে তিনি বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ উদ্যোক্তা সংগঠনের চেয়ারম্যান, দেশের ক্ষমতাসীন দলের বেসরকারী খাতের-উপদেষ্টা। এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক।
সালমান এফ রহমান সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সম্ভাবনা নিয়ে Nikkei Asian Review এর এক প্রতিনিধির সাথে আলোচনা করেন।
Nikkei Asian Review: পোশাক শিল্প বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানিকারক সেক্টর। আপনি কী এটা স্বীকার করবেন যে অন্যান্য খাত থেকে এটি সরকারের কাছ থেকে বেশী সহায়তা পায়?
সালমান এফ রহমান: পোশাক খাতের সঙ্গে যা ঘটেছে এটা আসলে হয়ে গেছে। আপনি জানেন সফল হওয়া থেকে বড় কিছু নেই। এই খাত সমৃদ্ধ হয়েছিল দ্রুত তাই উদ্যোক্তরা অনেকে এই খাতে বিনিয়োগ করেছেন এবং তাতে এই সেক্টরটি আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। এখন উদ্যোক্তারা অন্যান্য খাতেও মনোযোগ দিচ্ছেন যা অনেকাংশে সরকারের পলিসি গুলোর কারনেই হয়েছে বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাত এখন অনেক বড়। পোশাক উৎপাদনকারীরা তাই সরকারের বাণিজ্য নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
আমি মনে করি আরও উন্নতির জন্য যা প্রয়োজন তা হল পরিকাঠামোর উন্নয়ন। সরকারও এর উপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ( Special economic zones)করা এখন সরকারের লক্ষ্য। এগুলো স্থাপনের জন্য সরকার বিনিয়োগকারীদের জমি প্রদান করবে বলে ঠিক করেছে। যদি এটা ঠিক ভাবে করা যায় হলে আমার মনে হয় অন্যান্য খাতগুলোও এগিয়ে আসবে। বিদ্যুৎ খাতে সরকার ইতিমধ্যে চমৎকার কাজ করেছে। আপনি জানেন আগে ১৪,১৫ ঘন্টার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হত। এখন আর তা হয় না। মানুষ আগের সেই সময় ভুলেই গেছে।
আমি মনে করি এই খাতগুলোর মধ্যে আগামী বছর গুলোতে যে খাতটি সবচেয়ে আকর্ষনীয় হবে তা হল ঔষধ শিল্প। ঔষধের রপ্তানি প্রায় উর্দ্ধমুখী এবং আমরা ত্রমাগত আরো বহুমুখি হচ্ছি।
আর একটা কথা বলি, পরিমাণ এখনো খুবই নগন্য কিন্তু আমরা প্রতি বছর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ফুল রপ্তানি করছি। এখন আমরা জাহাজ ও বাইসাইকেল নির্মাণ করছি। যা দরকার তা হলো অন্যান্য খাতেরও বৃদ্ধি।
Nikkei Asian Review: দেশের পোশাক খাতের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে কী যথেষ্ট কাজ করা হয়েছে?
সালমান এফ রহমান: অনেক কাজ করা হয়েছে। এটি তো একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।এই খাত শুধু একবার বাধার সম্মুখীন হয়নি,অনেকবার হয়েছে। আমার মনে পরে প্রথম সমস্যাটি ছিল শিশুশ্রম যা পরে ঠিক ভাবেই তত্ত্বাবধান করা হয়েছিলো। এরপর সমস্যা ছিল মাল্টি ফাইবার অ্যারাঞ্জমেন্ট যা ২০০৪ সালে শেষ হয়। যখন উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানি পন্যের পরিমাণের উপর কোটা পদ্ধতি বিলুপ্ত হয় তখন বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। কিন্তু তা হয়নি। এবং তারপর আমরা আগুন এবং ভবন ধ্বস সমস্যার সম্মুখীন হই।
সত্যি যে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় কিন্তু আমাদের মূলভিত্তি খুব শক্ত।
Nikkei Asian Review: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমা হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন বিশেষ করে শ্রমিক সংগঠন গঠন করার ব্যপারে। এটি ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয় নাকি রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ?
সালমান এফ রহমান: এটা একটা সমস্যা। অন্তত আমি খুব জোরালোভাবে এটা অনুভব করি।আমি অনুভব করি এটা একটা দ্বি-বৈষ্যম, কারন আপনি জানেন ইউএসএ তে মাত্র ১৫% জনশক্তি সংঘবদ্ধ। নিজেদের দেশে কোন সংগঠন নেই কিন্তু তারা এই নীতি অন্যদের উপর প্রয়োগ করতে চায়। আমার কাছে এটা অদ্ভুত লাগে।
Nikkei Asian Review: বাংলাদেশ স্টক মার্কেটের উত্থান পতনের ইতিহাস রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করা কি এখন নিরাপদ?
সালমান এফ রহমান: প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের স্টক মার্কেটের প্রধান সমস্যা হল এটি অগ্রমুখী। এই বাজারটি পরিনত নয় এবং সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী তেমন নেই। এখানে কিছু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী রয়েছে যাদের কাছে বাজার সম্পর্কিত প্রকৃত তথ্য নেই। তাই যখন তারা বিনিয়োগে যায় বা বিনিয়োগ থেকে বেরিয়ে আসে তারা মৌলিক ভিত্তির পরিবর্তে গুজবের উপর নির্ভর করে। ২০১০-২০১১ বিপর্যয়ের পর সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কাজ করেছে কিছু করেনি। সবসময় বাজারের উত্থান-পতন হয় এবং বিপর্যয় ঘটে,যারা অর্থ হারায় তারা অন্যকে দোষারোপ করে। মূলত তাদের নিজেদেরই দোষারোপ করা উচিত।
সম্প্রতি যা ঘটেছে তা হল demutualization। এর কারনে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কিন্তু আমি এর কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছিনা।
Nikkei Asian Review: বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কি বৃহৎ বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে?
সালমান এফ রহমান: আমি তা বলবো না। আমি বলতে চাই বিশ্বাসের অভাবই পুঁজি বাজারের একমাত্র সমস্যা। দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ শক্তিশালী। উদাহরণস্বরূপ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন একটি সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠান।আমাদের একটি সঠিক বিচার ব্যবস্থা আছে যা ব্রিটিশ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে গঠিত। তাই সব কিছুই ঠিকঠাক আছে শুধু সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ছাড়া। তা অবশ্য এখন বাড়ছে।
বাংলাদেশ একটি ক্রমবর্ধমান দেশ,এটি একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের গত ১৫ বছর ধরে ৬% প্রবৃদ্ধি ছিল। অর্থনীতির সব অংশে উন্নতি হয়েছে। এমন এক সময় ছিল যখন সবকিছুই জাতীয়করন ছিল এবং সরকারই সব কিছু করতো। কিন্তু তা এখন সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রী পরিবর্তন হয়েছে। বেসরকারি খাত এখন শক্ত ভিত্তির উপর দাড়িয়ে আছে।
অনেক মানুষ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সমালোচনা করেন, কিন্তু আমি তাদের বলতে চাই বৃহৎ পরিসরে দেশের আজকের যে অর্থনৈতিক উন্নতি তার পেছনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অবদান আছে। বেক্সিমকো একটি ভাল উদাহরণ। আমরা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার নিয়েছি, তখন কোন বেসরকারি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের এত ঋণ দেয়ার মত পর্যাপ্ত মূলধনই ছিল না। তাই আমাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের কাছে যেতে হয়েছে কারণ ঐ সময় এত অর্থ ঋণ দেয়ার মত যথেষ্ট মূলধন একমাত্র তাদেরই ছিল। এখন অবশ্য কিছু বেসরকারী ব্যাংক এগিয়ে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য সাফল্যের পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো।
Nikkei Asian Review: সরকার ইস্টার্ন ব্লক এর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোক্তাদের সাথে কাজ করার জন্য মনস্থ করেছে। এটি কী কোনো প্রবণতা, এবং এটি কী ইতিবাচক?
সালমান এফ রহমান: আমি মনে করি সরকার যা করেছে তা খুবই প্রশংসার যোগ্য। কারণ আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হল সবাই আমাদের বন্ধু এবং কেউ আমাদের শত্রু নয়, আমাদের সকলের সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে, এবং এই সরকার ঠিক তাই করছে। তাই আমরা বিশাল বোয়িং বিমান কেনার অর্ডার দেই এবং শেভরন ও কনোকোফিলিপসের মত কোম্পানিকে অবিরত গ্যাস অন্বেষণের অনুমোদন দেই, এর সাথে সাথে আমরা চীনা, রাশিয়ান, ভারতীয়, জার্মান, গ্রেট ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয়দের সাথে লেনদেনও করি।
The interview of Salman F Rahman in English can be found in this link: Salman F Rahman said Bangladesh is moving in the right direction
Comments
Post a Comment