সালমান এফ রহমান বলেছেন মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য করনীতি সংস্কার প্রয়োজন

সালমান এফ রহমান, ঢাকা-১ আসনের সাংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা মনে করেন মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য করনীতি সংস্কার প্রয়োজন। জিএসএমএ-এর বাংলাদেশ মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ট্যাক্স স্টাডি-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। জিএসএমএ টিমের জুলিয়ান গোরম্যানের উপস্থাপনায় এ অনুষ্ঠানে  গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তৃতা করেন সালমান এফ রহমান। তিনি ছাড়া অনুষ্ঠানে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য প্রদ্যুত কুমার সরকার, জিএসএমএ টিম কর্মকর্তা জেনস বেকার এবং অ্যামটবের সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফরহাদ বক্তৃতা করেন।

তথ্য সূত্র করনীতি সংস্কার

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল সংযুক্তি হচ্ছে ডিজিটাল যুগের মহাসড়ক। ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে বাংলাদেশের অগ্রগতির লাইফ লাইন। এরই ধারাবাহিকতায় টেলিযোগাযোগ খাত হচ্ছে ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনের মুখ্য বিষয়।

জিএসএমএ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করা এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতে কর হ্রাস বাংলাদেশের জন্য উৎকৃষ্ট কৌশলগত নীতিগুলোর অন্যতম বলে বিবেচিত হতে পারে। মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশে ৪৪ ভাগ কর প্রদান করতে হয়, যা বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ। আগামী জুনে যে জাতীয় বাজেট উপস্থাপিত হবে তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী আইসিটি খাতের কর স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিতকরণ, সেবার মান উন্নয়নে বাধা এবং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে। এতে বলা হয়, আইসিটি খাতে করের সংস্কার হলো একটি অত্যাবশ্যকীয় নীতিগত সংস্কার, যা বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের আওতা বৃদ্ধি করবে। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশে মোবাইল সেবাদাতাদের প্রতি ১০০ টাকা রাজস্বের প্রায় অর্ধেকই কর এবং নানা ধরনের রেগুলেটরি ফি হিসেবে প্রদান করতে হয়। যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর এ ধরনের গড় ফি’র প্রায় দ্বিগুণ। এই অর্থ দেশের জনগণকেই পরিশোধ করতে হয় যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ে।

অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডার এবং টেলকোসমূহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণশক্তি। আমরা এখন ডিজিটাল যুগে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। কোভিডকালে তা প্রমাণিত হয়েছে। প্রযুক্তির আধুনিক ভার্সন ফাইভ-জি ২০১৮ সালে পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফাইভ-জি হচ্ছে চতুর্থ শিল্প যুগের প্রযুক্তি। ২০২১ সালের মধ্যে ফাইভ জি সেবা চালু করার সকল প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। মন্ত্রী বলেন, আগামী দিন হচ্ছে ডাটার যুগ। ভয়েজ সার্ভিসের তুলনায় ডাটা সার্ভিসের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। তিনি ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, ২০০৮ সালে এক এমবিপিএস ইন্টারনেটের দাম ছিল ২৭ হাজার টাকা তা ২৮৫ টাকায় আমরা কমিয়ে এনেছি।

অনুষ্ঠানে জিএসএমএ-এর এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান জুলিয়ান গরম্যান বলেন, জিএসএমএ বিশ্বের ৭৫০টিরও বেশি অপারেটরকে প্রতিনিধিত্ব করে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক শিল্প কর নীতির অনুপস্থিতি বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপকল্পকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জিএসএমএ অর্থনীতির অন্যান্য স্তরকে মোবাইল খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের সুপারিশ করে। জিএসএমএ সুপারিশ করে যে, করারোপ প্রক্রিয়া সুসংহত করা দরকার এবং মোবাইল গ্রাহকদের সামর্থ্য বিবেচনা করে এই খাতের কর কমানো দরকার। অ্যামটব প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, টেলিকম খাত বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি। তবে দুর্ভাগ্যজনক যে কর ব্যবস্থা অর্থনীতিতে এই খাতের অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে না। টেলিকম খাত যেমন তামাকসহ অন্যান্য শিল্পের তুলনায় যতটা ন্যায্য তার চেয়ে বেশি কর প্রদান করে। এটা ডিজিটাল অবকাঠামো সৃষ্টিতে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। মোবাইল খাতের আর্থ-সামাজিক অবদান বিবেচনা করে এবং ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রা ত্বরান্বিত করার জন্য আমরা সরকারকে বিনিয়োগবান্ধব কর ব্যবস্থার প্রবর্তনের অনুরোধ করছি।

Comments

Popular Posts