প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এই কথা বলেন। আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৪ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়ন হয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
অর্থনৈতিক সাফল্যের অন্যান্য চাবিকাঠি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ধরুন বিদ্যুত সংকটের কথা; ১৪ বছর আগে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন, তখন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে দেশের অবস্থা শোচনীয় ছিল। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল মাত্র ৪ হাজার মেগাওয়াট; বর্তমানে, এটি প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট। বাংলাদেশের এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। যাইহোক, এখন আমরা রাতে আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি এবং সকল ধরনের বৈদ্যুতিক ঘাটতি দূর করার পথে আছি। তিনি আরো জানান, আমাদের পোশাক শিল্প আমাদের সমৃদ্ধির আরেকটি চাবিকাঠি। আমরা গার্মেন্টস দিয়ে শুরু করেছি এবং পরে গার্মেন্টস খাতে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ও যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছি। আমাদের এখন আধুনিক সমন্বিত ব্যবসা আছে। আমরা একটি তুলা দিয়ে শুরু করে একটি শার্ট বানিয়ে ফেলেছি। ফলস্বরূপ, বস্ত্র শিল্পে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ আসছে। এই শিল্পটি মূলত অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে এতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও ছিল।
সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যার জনসংখ্যা প্রায় ১৭০ মিলিয়ন, কিন্তু আমরা এখন খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে, দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থেকে যায়। এখন চাল, শাকসবজি এবং মাছ যথাক্রমে আমাদের চতুর্থ এবং তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি পণ্য। অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে জনগণকে দারিদ্রতা থেকে বের করে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। আরও বলেন, যেহেতু সরকার আইসিটিকে প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তাই বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান প্রতিষ্ঠার জন্য এটি একটি বিশাল সম্ভাবনাময় খাত। ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে আমরা মহামারীর সময় সফলতা পেয়েছি এবং আমরা ‘ফাইবার অপটিক ব্যাকবোন’কে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণা বাংলাদেশকে আইসিটি-চালিত রফতানি শিল্প এবং ডিজিটাল পরিষেবাগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছে। আমরা চমৎকার সংযোগসহ একটি মাঝারি খরচে ফোরজি সংযোগ অফার করছি।
আঞ্চলিক সহযোগিতার একীকরণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা স্থাপন করেছি। ভারতের সাথে আমাদের ‘পাওয়ার-শেয়ারিং’ চুক্তি আছে; এখন আমরা নেপালে জলবিদ্যুৎ উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক মতপার্থক্য হ্রাস করি এবং এই অঞ্চলকে একীভূত করি, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে আঞ্চলিক একীকরণের জন্য কি কি পদক্ষেপ বা উদ্যোগ নেওয়া দরকার জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের সমাধান করতে হবে অন্যথায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একত্রীকরণ সম্ভব হবে না।
আলোচনা অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন ব্লুমবার্গ নিউজের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি হাসলিন্ডা আমিন।
Comments
Post a Comment