জহুরুল ইসলাম ও ইসলাম গ্রুপ



জহুরুল ইসলাম বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যে এক কিংবদন্তী নাম। তিনি ‘বাংলাদেশের ব্যবসার জনক’ হিসেবে  পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের ধারনাই পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। জহুরুল ইসলাম শুধু একজন সফল ব্যবসায়ীই ছিলেন না তিনি একাধারে একজন  সফল উদ্যোক্তা ও সমাজকর্মীও ছিলেন। তিনি ১৯২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার ভাগলপুর গ্রামে এক বিশিষ্ট বনিয়াদি ব্যবসায়ীক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন করেন। সেই সুত্রে বলতে গেলে ব্যবসা তার রক্তে মিশে ছিল। পরবর্তিতে তিনি ব্যবসা খাতে অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছেন।

জহুরুল ইসলাম একজন ঠিকাদার হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলন।তখন তিনি ‘বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি’ গড়ে তুলেন। প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে উন্নতি করতে থাকে।পরবর্তিতে তিনি প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করেন এবং এর কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৬৪ সালে  তিনি বাংলাদেশের প্রথম রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তিনি সুপরিচিত হয়ে উঠেন তার প্রতিষ্ঠিত ‘ইসলাম গ্রুপ’এর মাধ্যমে। তিনি ১৯৬৪ সালে ‘ইসলাম গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ শিল্প, ওষুধ, বস্ত্র, পাট শিল্প, বিমান, সিরামিক, মিডিয়া, রিয়েল এস্টেটসহ প্রায় সকল খাতে প্রবেশ করতে থাকে এবং প্রায় সকল ক্ষেত্রেই সফলতার সাক্ষর রাখে।‘ইসলাম গ্রুপ’ বাংলাদেশের গন মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠে।তিনি তার প্রতিষ্ঠানে সুন্দর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করেছিলেন।।জহুরুল ইসলাম তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের নানা রকম সুযোগ সুবিধা দিতেন এর মধ্যে চিকিৎসা সুবিধা, পেনশন ভাতা, দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ, চাকরির প্রশিক্ষণ  ইত্যাদি ছিল অন্যতম।তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

জহুরুল ইসলামের অনন্য চিন্তা ধারা, একনিষ্ঠ অধ্যসায়,কঠোর পরিশ্রম এবং যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে খুব দ্রত ‘ইসলাম গ্রুপ’ বাংলাদেশের  শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয় এবং  জহুরুল ইসলাম বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যে এক অঘোষিত সম্রাটে পরিনত হন।একজন সফল ব্যবসায়ী ছাড়াও তিনি একজন ভাল মানুষ ছিলেন।তিনি নানা রকম দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। দেশের অসহায় গরীব মানুষকে সাহায্য সহযোগীতা করার জন্য অনেক সংস্থা গড়ে তোলেন।তিনি দেশের অসহায় গরীব মানুষের সুষ্ঠ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করেন।প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯২  সালে যাত্রা শুরু করলেও,১৯৮৯ সাল থেকেই হাসপাতালটি সেবা দান শুরু করেছিল।প্রতিষ্ঠালগ্নে হাসপাতালটি মাত্র ২৫০ সয্যাবিশিষ্ট ছিল বর্তমানে হাসপাতালটিতে ১২০০ টির অধিক সয্যার ব্যবস্থা রয়েছে।এখনও গরীব অসহায় মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতালটি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

জহুরুল ইসলাম ১৯৯৫ সালের ১৯ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে মারা যান। তাকে তার গ্রামের বাড়িতে, ভাগলপু্রে দাফন করা হয়।শুধু ব্যবসায়ী হিসেবে নয় মানুষ হিসেবেও জহুরুল ইসলাম নতুন প্রজন্মের কাছে অনুসরনের এক প্রতিমূর্তি।তার আদর্শ ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা  হিসেবে রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলী  ছিল হৃদয়গ্রাহী,  তাঁর দার্শনিক চিন্তাধারা ছিল ব্যতিক্রমী; এবং উভয়ের সমন্বয় তাকে একটি সফল মানুষ করে তোলে জহুরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের ব্যবসা খাতের একক অধিপতি।তিনি বাংলাদেশের ব্যবসা খাতকে উচ্চস্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন।

Comments

Popular Posts