রাষ্ট্রয়াত্ত সম্পত্তি লিজ দেয়া উচিত না অনুচিত?

রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত জমিগুলো লিজ দেয়ার বিতর্কটি এখনো শেষ হয়নি। যদিও তত্ত্বগত দিক বিবেচনা করলে বিষয়টির সমাধান করা মোটেও কঠিন কিছু নয়। বেসরকারিকরণ কমিশন বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়নি। তারপর সময় সময় বেসরকারিকরণ কমিশন সরকারের সামনে বিষয়টি নানভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সরকারের জ্ঞানের অপরিশীলতার কারণে বিতর্কটি যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে।

সম্প্রতি শেষ হওয়া মন্ত্রি পরিষদের অর্থনৈতিক বিষয়ক মিটিংয়ে কমিশনের উপস্থাপিত বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় জানানো হয় সরকারের শেষ সময়ে এসে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার কোনো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে না। কেউ কেউ আবার প্রস্তাবের মধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্যও খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে।

বেসরকারিকরণ কমিশনের যুক্তিতে দুটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তিগুলোর মোটা অঙ্কের লোকসান ইনক্রিমেন্টের ভিত্তিতে কমিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, অব্যবহৃত জমিগুলো লিজ দেয়ার ভিত্তিতে কিছু টাকা উপার্জন করা।

তবে এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে সরকার যদি শীঘ্রই রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত সম্পত্তি বেসরকারিকরণ না করে অথবা লিজ না দেয় তাহলে এগুলোর দায়ের পরিমাণ সরকারের বহন ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাবে। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে অব্যবহৃত এবং অলাভজনক সম্পত্তির দায়ের পরিমাণ গেল বছর (২০১২) ছিল ৫১.৯০ বিলিয়ন টাকা। যা তার আগের বছর ছিল ৩৭.৩৯ বিলিয়ন টাকা। বেসরকারিকরণ কমিশনের এক হিসেবে দেখা যায় ৭৭টি রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৫’শ একর। এই অব্যবহৃত জমিগুলোর সঠিক ব্যবহার এবং লিজ দেয়ার মাধ্যমে সরকার তার অর্থনৈতিক বোঝা কিছুটা হলেও কমাতে পারে।

কিন্তু রাষ্ট্রয়াত্ত সম্পত্তির মূল মন্ত্রণালয়গুলো এ বিষয়ে কোনো চুক্তিতে যেতে রাজি নয়। তাদের মতে সরকারের পরে থাকা এক খন্ড জমি লিজ দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কয়েকদিন আগে শিল্পমন্ত্রী এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে রাষ্ট্রয়াত্তজমিগুলো স্কুলের মাঠ বানানোর জন্য ব্যবহার করা হবে। কিন্তু এটা ভালো উদ্যোহ হলেও জমিগুলো অলাভজনকই থেকে যাবে। তবে এক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুল কলেজ গুলোর কাছে মাঠ বানানোর জন্য লিজ দেয়া যেতে পারে।

সব মিলিয়ে রাষ্ট্রয়াত্ত সম্পত্তিগুলো নানানভাবে বিবাদের বিষয়ে হয়ে আছে এবং সরকার এ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করতে চায় না। আর এমন পরিস্থিতিতে এন্টারপ্রাইজগুলো অদক্ষদের হাতে চলে যাচ্ছে। তবে হাত বদলের পদ্ধতিটা হতে পারে বেসরকারিকরণ। কিন্তু এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে বেসরকারিকরণ বিষয়টি বেশ  সময় সাপেক্ষ এবং জটিল। এটা করা হলে নানা জটিলতা তৈরি হবে। তাই এই বিষয়ের দিকে খুব দ্রুত আগানো যাবে না। তবে টেন্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তিগুলো বিক্রি করা যায়।

তবে অব্যবহৃত জমিগুলো লিজ দেয়াই কি সমস্যার একমাত্র সমাধান? তবে লিজ দেয়ার মাধ্যমে সেই জমিতে ছোট আকারে শিল্প কারখানা স্থাপনের অনুমতি দেয়া যেতে পারে। তবে সেটা রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির মূল যে নকশা সেটার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি প্রয়োজন।

Comments

Popular Posts