আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং

 বাংলাদেশের জন্য পদ্মাসেতু একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। সালমান ফজলুর রহমান বলেন, পদ্মাসেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বাংলাদেশে যাতে এত বড় অবকাঠামো না হয় সেজন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ ছিল খুবই ভিত্তিহীন। পদ্মাসেতু যেন বাংলাদেশ না করতে পারে সেটাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয় পদ্মাসেতুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা। কোথাও দুর্নীতি হয়নি। নিজের টাকায় পদ্মাসেতু করা নিয়েও অনেকে সমালোচনা করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, বিএনপি নেতারা পদ্মাসেতু নিয়ে সমালোচনা করছেন। দলটির নেতারা আগে বলেছিলেন সেতু ভেঙে যাবে, এটা কনস্ট্রাকশন করা যাবে না। যখন কনস্ট্রাকশন হয়ে গেল তখন তারা ক্রেডিট নিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মিথ্যাচার শুরু করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলেন যে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগের অন্তত সাড়ে তিনগুণ সুফল পাবে বাংলাদেশ। সরকারের ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে পদ্মা সেতু একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের কাজ করবে। এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের শেষ ভৌগলিক বিভাজন শেষ হতে যাচ্ছে। এই সেতুর মাধ্যমে সংযোগের আওতায় আসতে যাওয়া ২১ জেলার মধ্যে ১৩টিতে দারিদ্র্যের হার বাংলাদেশের গড় দারিদ্র্য হারের চাইতে বেশি। এই জেলাগুলো দেশের মূলধারায় আসলে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির দরজা খুলবে। পদ্মা সেতু চালু হলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ১.২৩% বাড়বে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলো জিডিপিতে আরও দুই শতাংশের বেশি যোগ করবে। ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপির আড়াই শতাংশ হিসাবে সেতুটি থেকে আসবে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ হিসাবে নির্মাণ ব্যয়ের অন্তত সাড়ে তিনগুণ বেশি সুফল আসবে। সেতুর পূর্ণাঙ্গ সুফল কাজে লাগাতে গেলে ইনভেস্টমেন্ট কানেকটিভিটি নিশ্চিত করতে হবে। ২১ জেলায় প্রস্তাবিত ১৭টা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে সাড়ে সাত লাখ কর্মসংস্থান হবে।সরকার সেতু ও সড়ক নির্মাণ করে উন্নয়নের মেরুদন্ড তৈরি করে দিয়েছে। এখন চারপাশে বেসরকারি খাতে এলোমেলো উদ্যোগ নিলে এই উন্নয়ন টেকসই হবে না। এই কারণে রাস্তার দুই পাশে পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে হবে।

বিশ্বব্যাংক সরে গেলে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালেও সরকার এই চ্যালেঞ্জ সফলভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছে বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। প্রকল্পে বিদেশি মুদ্রার যোগানে অগ্রণী ব্যাংকের ভূমিকাও তিনি তুলে ধরেন।তিনি বলেন, "শুরু থেকে এ পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক প্রকল্পে বিদেশি মুদ্রা হিসেবে ১.৬ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে। এরপরেও আমদানি বাণিজ্য, রপ্তানি বাণিজ্যে কোন সমস্যায় পড়েনি ব্যাংকটি।"

পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে দেশীয় উদ্যোক্তারা ২.২৮ লাখ টন সিমেন্ট সরবরাহ করেছেন। আর অন্যান্য কাজ মিলে সেতু প্রকল্পে মোট ব্যবহার হয়েছে ৫.৬২ লাখ টন দেশী সিমেন্ট। অস্ট্রেলিয়ার স্টিল ব্যবহার করে কাজ শুরু হওয়া পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে দেশীয় স্টিল ব্যবহারের মাধ্যমে। এ প্রকল্পে এ পর্যন্ত দেশীয় ২.১৫ লাখ টন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯২ হাজার টন ব্যবহার করা হয়েছে মূল স্ট্রাকচারে।

Comments

Popular Posts